মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
খুলনার যুবক নাঈম মোল্লা হত্যাকান্ডে গ্রেফতার টিকটকার নুসরাত আমিন সুমনা নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় সীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত - ২ এর বিচারক মো: আল আমিন।পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একইসাথে তার মা নুর নাহার বেগমকে কারাগারে প্রেরন করে আদালত। জানাগেছে নাঈম মোল্লা দীর্ঘ ১০ বছর খুলনা শিপইয়ার্ডে আউটসোর্সিং হিসেবে কর্মরত ছিল। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে টিকটকার নুসরাত আমিন সুমনার সাথে পরিচয় হয়। শিপইয়ার্ড এলাকার একাধিক স্থান ঘুরে জানাগেছে, সাতক্ষীরা জেলার মুন্সিপাড়া ওয়ার্ড নং - ২ এর বাসিন্দা রুহুল আমিনের মেয়ে এবং একই এলাকার শিমুল হোসেনের স্ত্রী নুসরাত আমিন সুমনা। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। শিপইয়ার্ড মেইন রোড সংলগ্ন মোশারফ হোসেনের বাড়ির দ্ধিতীয় তলার ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। চেহারা সুন্দর হওয়ায় টিকটকার হিসেবে ঔই এলাকায় বেশ পরিচিতি রয়েছে তার। জানাযায়, সুমনার একাধিক যুবকের সাথে সম্পর্ক আছে। সেই উঠতি বয়সি যুবকের প্রেমের ফাদে ফেলে এবং টিকটক করে অর্থ উপার্জন করত।প্রয়োজন শেষ হলে ঔই যুবকদের সাথে সম্পর্ক ছেদ করতো। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নাঈম মোল্লার সাথে। নাঈম মোল্লা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য না জেনে তার সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পরিনতি হয় মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। সুত্রটি আরো জানায়, ফেসবুকে পরিচয় হলেও তাদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়। সুমনার বাড়িতে প্রায় যাতায়ত ছিল নাঈমের। তার বাসায় দীর্ঘক্ষন অবস্থান করতো সে। এক সময়ে বিশেষ অন্তরঙ্গ একটি ভিডিও ধারন করে নিহত নাঈম যেটি টিকটকার সুমনা জানতো না। গত কয়েকদিন আগে সুমনা ও নাঈমের মধ্যে একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য হয়। আর একারনে নাঈমকে তার বাসায় এবং তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। আর এতে বাঁধ সাধে নাঈম। সুমনাকে ভিডিওর কথা বলে ব্লাকমেইল করতে থাকে নাঈম। তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে সুমনা। এরই ধারাবাহিকতায় অপর এক যুবকের সাথে সম্পর্ক হয় সুমনার। তাকে দিয়ে শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করে সুমনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঔই যুবককে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিপইয়ার্ড মেইন গেটের সামনে ভাড়াবাড়িতে ডেকে নেয় সুমনা। পরিকল্পনা দুপুরে তারা সেখানে খাওয়া দাওয়া করে। বিকাল ৪ টার পর শিপইয়ার্ডে কাজ শেষে নাঈম দুপুরের খাওয়া শেষ করে সুমনার ভাড়া করা বাড়ির আশপাশে ঘুরতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে নাঈম সুমনার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি বলে সুত্রটি জানায়। অপর একটি সুত্র জানায়, রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সুমনা, নাঈম এবং উপস্থিত এক যুবকের মধ্যে ব্যাপক কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উপস্থিত ঔই যুবক ঘরের মধ্যে থাকা একটি রড দিয়ে নাঈমের মাথার বাম পাশে আগাত করে। ঔই আঘাতে তার মৃত্যু হয়। ঘড়ির কাটা যখন ২ টা ছুঁইছুঁই তখন উপস্থিত ঔই যুবক এবং নুসরাত আমিন সুমনা নাঈমের মরদেহ শিপইয়ার্ড মেইন রোড সংলগ্ন মোশারফের বাড়ির সামনে হাত- পা এবং মুখ পলিথিন দিয়ে বেধে রাস্তায় ফেলে যায়। পুলিশ লাশের পরিচয় পাওয়ার জন্য সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সুমনার নতুন বন্ধুর ভয়ে এলাকার কেউ কোন কথা বলেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই রহিম বলেন, শুক্রবার লাশ পাওয়ার পর একটি গোপন সুত্র জানায় সুমনার বাড়িতে মৃত যুবকের যাতায়ত ছিল। দুপুরে আমরা তাকে এবং তার মাকে হেফাজতে নেই। কিন্তু তারা হত্যাকান্ড সম্পর্কে প্রথমে মুখ খোলেননি। ব্যাপক জিজ্ঞসাবাদের এক পর্যায়ে নিহত যুবকের পরিচয় এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিল বলে সীকার করে সুমনা।আদালতে সেচ্ছায় সীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিতে চাইলে, রোববার তাদের দুজনকে আদালতে আনা হলে সুমনা নিজের দায় সীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে। এদিকে নিহত নাঈমের ভাবি রেখা খান বলেন, সে অপরাধী। দেশে আইনের শাসন আছে। তাকে তারা পুলিশে দিতে পারতো। কিন্তু তারা তা না করে আমার দেবরকে হত্যা করেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে শিপইয়ার্ড মেইন গেট সংলগ্ন মোশারফের বাড়ির সামনে হাত- পা ও মুখ পলিথিন দিয়ে বাঁধা অবস্থায় নাঈমের লাশ পাওয়া যায়। তখন লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরদিন ময়না তদন্তের সময় তার আপন চাচাতো ভাই লাশের পরিচয় শনাক্ত করে। মৃত: নাঈম বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বাড়ইখালী এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী মোল্লার ছেলে। সে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে খুলনা শিপইয়ার্ডে প্লাম্বিং শাখায় আউটসোর্সিং হিসেবে কর্মরত ছিল।