
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরে কয়রা উপজেলার হরিনখোলা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪ / ২ নম্বর পোল্ডারের পাঁচটি স্থানের ৩০০ মিটার নদে ধসে পড়েছে। এই ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাধ সংলগ্ন হরিনখোলা, ২ নম্বর কয়রা,, গোবরা, ঘাটাখালী,মদিনাবাদ গ্রাম সহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। হরিনখোলা গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিন্ম চাপের প্রভাবে রাতে সাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদে অন্তত ৪ ফুট বেশি উচ্চতায় জোয়ার হয়। আজ ভোরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বেড়িবাঁধে হঠ্যাৎ ফাটল ও ধসের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজনের চোখের সামনে ভাঙন রোধে পাওবোর দেওয়া জিওব্যাগ ও বড় বড় মাটির খন্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার অংশে মুহুর্তেই নদে বিলিন হয়ে যায়। ভাঙন রোধে অবিলম্বে পাওবোর পক্ষ থেকে ব্যাবস্থা নেওয়া না হলে ফসলি জমি সহ অসংখ্য মাচের ঘের নদের ডুবে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন। আজ সকালে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাধ এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, বাধের কায়েকটি স্থান ধসে গেছে। এসব জায়গায় মাটি সরে গিয়ে মধ্যের বালু বেরিয়ে গেছে। ঔই বালুতে পানির ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে। নদের পানির গতিপথ পাল্টে বেড়িবাধের গায়ে আঁচড়ে পড়েছে। ধসে যাওয়া স্থানগুলো সংস্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেঊ পাশ থেকে মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন, আবার কেউ বাধের ঢাল থেকে জিও ব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাধের স্থানে দিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজ শেখ মাটি কেটে বাধের ধসে যাওয়া স্থানে দিতে দিতে বললেন, “আমরা কাছের বাসিন্দারা বাধরক্ষায় আগায় না আসলি এ বাধ বানতি অনেক দেরি হবে। তখন এলাকায় আর বাস করার পরিস্থিতি থাকবে না। বাধ মেরামতে যাদের দায়িত্ব মধ্যে পড়ে তারা কেউ সময় থাকতি এগোয় না। যত মরন আমাগে মতন খাইটে খাওয়া মানুষের “। হরিনখোলা গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুল মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে এই বাধ নির্মান করা হয়েছিল। অথচ এরই মধ্যে বাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নির্মানের সময় ওপরে এবং বাধের দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে বালু দেওয়া হয়। একারনে দুর্বল হয়ে এখন একটু জোয়ারের পানি বাড়লেই বাধ ধসে যাচ্ছে। বাধ যাতে না ভাঙে, সেজন্য নদের তীরবর্তী পাকাব্লক দেওয়া দরকার। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী গোবরা স্কুলের শিক্ষক বিল্লাল হোসেন বলেন, হরিনখোলা গ্রামের পাশের ঔই বাধকে বলা হতো কয়রার সবচেয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০২১ সালে এই বাধ নির্মান করা হয়েছিল। তবে সেখানে যত বড় প্রকল্প ছিল, কাজ তত ভাল হয়নি। অধিকাংশ স্থানে বাধের দুইপাশে ও ওপরের মাটি দিয়ে ভেতরে বালু দেওয়া হয়। একারনে বাধ দুর্বল হয়ে ধসে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকে ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কি হবে, তা বলা যাচ্ছে না। খুলনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, গতকাল থেকে নিন্মচাপের প্রভাবে অসাভাবিক জোয়ার বেড়েছিল। কয়রা,হরিনখোলা, এলাকার বেড়িবাঁধ ধস এবং চৌকুনী এলাকার কয়রা নদীর বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছিল। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাঙন কবলিত এলাকায় উপসহকারী প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করেছেন আপাতত ভাঙনের পরিধি যাতে না বাড়ে এজন্য বাধের গায়ে জিও ব্যাগ দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হবে।