
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
প্রায় সাড়ে তিন বছর বন্ধ থাকার পর খুলনার রাস্ট্রায়ত্ত পাটকল দৌলতপুর জুটমিলটি ফরচুন গ্রুপের কাছে ইজারা দেওয়া হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এখন বেসরকারি খাতের ফরচুন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনি ওয়াল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি সেখানে নতুন করে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু কাঁচামালের অভাবে গত ৯ মে মিলের মিলের দুটি সেকশন বন্ধ করা হয়। যদিও কতৃপক্ষ বলছেন, তারা শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছেন। ১৬ মে মিল খোলার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে কতৃপক্ষ মিল খোলার ব্যাপারে আরো সময় নিয়েছে তারা আগামী ৮ জুন মিল খোলার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছে। বন্ধকৃত সেকশন দুটি হলো কাটিং ও সুইন। আগামী ৯ জুন কাচামাল প্রাপ্ত সাপেক্ষে ঔই সেকশন দুটি পুনরায় চালু করা হবে বলে কতৃপক্ষ জানান। এই মিলে পাট পন্যর পাশাপাশি ঔই পাটকলে জুতাও তৈরি করছে। পাটপন্য উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও জুতা তৈরির ফ্যাক্টরীর সেকশন দুটির শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ দুটি সেকশনে দুশত শ্রমিক কাজ করে। ছুটি শেষে তাদের বেতন দেওয়া হবে বলে কতৃপক্ষ জানায়। দৌলতপুর পাটকলে মিলের প্রধান ফটকে বড় করে লেখা ” দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, পরিচালনায় ইউনিওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি। কিন্তু অতিসম্প্রতি মিলের প্রধান ফটক থেকে ইউনি ওয়াল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি লিমিটেড নাম মুছে ফেলা হয়েছে। এতে করে ঔই জুতা ফ্যাক্টরীতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি কতৃপক্ষ জুতা ফ্যাক্টরীটি ও বন্ধ করে দিবে আর চালু করবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঔই জুতা ফ্যাক্টরীতে চাকরিরত একাধিক শ্রমিকদের ধারণা কতৃপক্ষ মনে হয় আর জুতা ফ্যাক্টরি চালাবেন না। যার কারনে মিলের মুল ফটক থেকে ইউনিওয়াল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি লিমিটেড নাম মুছে ফেলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে স্থাপিত দৌলতপুর জুট মিলটি ২০০২ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর ২০১২ -১৩ অর্থবছরে মিলটি পুনরায় চালু করা হয়েছিল। কিন্তু লোকসানের কারনে ২০২০ সালের জুলাইয়ে আবারও বন্ধ হয়ে যায় পাটকলটি। গত ৪ সেপ্টেম্বর মুল কারখানা সহ পাটকলের প্রায় ১৪ একর জায়গা ইজারা দেওয়া হয় ফরচুন গ্রুপকে। মাসিক সাড়ে ৯ লাখ টাকায় ৩০ বছরের জন্য এ ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতি ৫ বছর পর পর ১০ শতাংশ করে ভাড়া বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে কয়েক বছরের ভাড়া পরিশোধ করেছে ফরচুন গ্রুপ। ফরচুন গ্রুপের মহাব্যাবস্থাপক ( প্রশাসন) মো: ইসহাক আলী বলেন, মিলটি আমরা চালু করেছি। মিলটি দুটি ভাগে উৎপাদন অব্যাহত ছিল। তবে জুতার কাচামালের সংকটের কারনে আপাতত শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে জুটের অংশ চালু রয়েছে। সে অংশে ১৭৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। আশা করছি আগামী মাসে কাঁচামাল প্রাপ্ত সাপেক্ষে বন্ধ রাখা অংশে উৎপাদনে যেতে পারব।এ মিলে উৎপাদিত পাটপন্য ভারত, তুরস্ক, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। মো: ইসহাক আরো বলেন, জুতার কাচামাল ভারত থেকে আনা হয়। যেহেতু এদেশের সাথে নানা বানিজ্যক চুক্তি বাতিল করেছে সরকার। সেজন্য বিকল্প বাজার চায়না থেকে কাচামাল আনার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, চাকুরির ৬ মাস হলেই হলে শ্রমিককে স্থায়ী করা হয়। সে অনুযায়ী তার বেতন বাড়ানো হয়। দেওয়া হয় স্থায়ী পরিচয় পত্র। জুতার সেকশনে ৯০ ভাগ মহিলা শ্রমিক জুতার কাজ করে। তারা কাজে খুবই মনোযোগী বলে তিনি জানান। মিল শ্রমিক নুরজাহান বেগম বেচিন বিভাগে হেলপার পদে কর্মরত আছেন বলে তিনি জানান। তিনি পাট সেকশনে কাজ করছেন।তিনি বলেন মিলের পরিবেশ খুবই ভাল। প্রতিমাসে নিয়মিত টাকা তার একাউন্টে চলে যায়। বেতন পেতে কোন সমস্যা হয় না। প্রতিমাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়া হয়।তিনি বলেন এখন বেতন কম। তার পর ও কর্মসংস্থান হওয়ায় খুশি। কিন্তু জুতার অংশ বন্ধ হওয়ায় আতংকে রয়েছেন বলে জানান। আর জুতার অংশে কাজ করা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারী শ্রমিকরা বলেন, ফরচুন গ্রুপ আর হয়ত মিল চালু করবে না, একারনে মিলের মুল ফটক থেকে ইউনিওয়াল্ড ফুটওয়্যার টেকনোলজি লিমিটেড নাম মুছে ফেলেছে। এব্যাপারে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দৌলতপুর জুট মিলের প্রকল্প প্রধান তানজিলা মাহমুদ বলেন, কাচা মালের সংকটের কারনে মিলের দুটি সেকশন বন্ধ করে দিয়েছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি তিনি অবগত। তবে তারা ঈদের পর চালু করবে বলে তাকে জানিয়েছে বলে তিনি জানান।