শাহ আলী তৌফিক রিপন, লেখক
বাংলাদেশে গণমাধ্যম বন্ধের ইতিহাস থাকলেও, সরাসরি দখলের মতো নজির ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই ব্যতিক্রমও ভেঙে গেছে। রাজনৈতিক মোর্চা, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনে, দেশের বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে—যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়ানক এক ইঙ্গিত।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে দেশের গণমাধ্যম ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যয়ের মুখে। সারাদেশে অন্তত ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা ও সহিংসতার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
অনেক সাংবাদিক গ্রেফতার হলেও মাত্র কয়েকজন জামিন পেয়েছেন। বাকিরা আত্মগোপনে, কারণ আদালত জামিন দিচ্ছে না।আগস্ট ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
স্বাধীন সাংবাদিকতা, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং সরকারবিরোধী তথ্য প্রকাশ ছিলো মূল কারণ।অক্টোবর থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১৬৭ জন সাংবাদিকের কার্ড বাতিল করা হয়।সাংবাদিকদের সচিবালয় ও সরকারি দপ্তরে প্রবেশাধিকার নষ্ট হয়ে যায়।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। শরীয়তপুরে এক সাংবাদিককে হামার ও ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। সাংবাদিকরা গুরুতর আহত, অনেকেই হুমকির মুখে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন।
৫ আগস্টের পর ATN Bangla, Ekattor TV, Independent TV, Somoy TV-সহ বহু মিডিয়া অফিসে হামলা চালানো হয়।
অফিস ভাঙচুর, কর্মীদের ভয়ভীতির মধ্যে রাখা, সম্প্রচার বিঘ্নিত হওয়া।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাকে “অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক” বলে নিন্দা জানিয়েছে Reporters Without Borders (RSF)।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেছেন, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট বাংলাদেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও পেশাগত নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রায় বিলুপ্ত। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা ও হস্তক্ষেপ ছাড়া গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ মনে হচ্ছে গহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত।