
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
একদিন পর ঈদুল আজহা। কোরবানীর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শেষ মুহুর্তে জমজমাট খুলনার ২২ টি স্থায়ী অস্থায়ী পশুর হাট। প্রায় প্রতিটি হাটে এসেছে পর্যাপ্ত পশু। তবে দাম বেশ চড়া। হাটে আসা প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের চাহিদা ছোট আকারের গরুর। তাই ব্যাপারি ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি নিয়ে এসেছেন। তবে আকার ছোট হলেও এসব গরুরদাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতা। গো খাদ্যর দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ার কারনে ছোট গরুর দাম বলে দাবি করছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত নগরীর জোড়াগেট কোরবানীর পশুর হাটে ৬৮২ টি গরু, ২২২ টি ছাগল ও ৪ টি ভেড়া বিক্রি হয়েছে। মোট ৮৫৪ টি পশু বিক্রি করে কেসিসির রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩০ লাখ ৩ হাজার টাকা। খুলনা জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: শরিফুল ইসলাম জানান, সাধারণত ২ মন ওজনের গরু ছোট আকারের। দুই থেকে তিন মন ওজনের গরু মাঝারি এবং এর ওপরের ওজনের গরু বড় আকারের। খুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। জোগানও রয়েছে। নগরীর জোড়াগেটে তিন ছেলেকে নিয়ে কোরবানীর গরু কিনতে এসেছেন দুই চাকুরিজীবী মিজানুর রহমান ও ইমরান হোসেন ইমন। সামর্থ্য না থাকায় দুই পরিবার এবার এক গরু দিয়ে কোরবানী করবে। বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা বেশকিছু গরু দেখেন তারা। প্রায় এক ঘন্টা ধরে দেখেও গরু না কিনে বাজার থেকে বের হতে দেখা যায় তাদের। জানতে চাইলে মো: মিজানুর রহমান বলেন, আয়ের সাথে ব্যয়ের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই একই ভবনের আরেক পরিবারের সাথে এবার কোরবানী করতে ছোট গরু কিনতে এসেছি। বাজারে ছোট ও মাঝারি গরু পর্যাপ্ত থাকলেও দাম বেশি। গতবার যেসব গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজারে কেনা গেছে, এবার দাম দাম চাইছে ১ লাখ ২০ হাজারের ওপরে। মো: ইমন বলেন, ছোট অনেক গরু দেখে একটিও কিনতে পারিনি। কারন গরু পছন্দ হলেও দাম বাজেটের চেয়ে বেশি। ছোট একটি গরুর দাম কেমনে এক লাক টাকার ওপরে হয়? এত দাম দিয়ে কিভাবে কোরবানীর পশু কিনবে মধ্যবিত্তরা? কোরবানী ঘনিয়ে এলেও দাম ছাড়ছেন না ব্যাপারীরা। এই দুই ক্রেতার মতো দাম বেশি নিয়ে হতাশার কথা প্রকাশের পাশাপাশি অনেকে ঝাড়লেন ক্ষোভও। কেশবপুর থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী মো: সোহেল বলেন, বাজারে এবার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। তাই ছোট গরু বেশি এনেছি। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। গো খাদ্যর দাম বৃদ্ধি সহ নানা কারনে এবার ছোট গরুর দাম কিছুটা বেশি। কালিয়া থেকে ৩০ টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী মাহি উদ্দিন। এর মধ্যে ২০ টি ছোট। মাহি উদ্দিন বলেন, বড় গরু কেনে খুব কম মানুষ। বাজারে ছোট গরুর ক্রেতার সমাগম থাকলেও বিক্রি কম। বেশিরভাগ ক্রেতা দরদাম করছে কেবল। গরুর লালন পালন খরচ বেশি। তাই সামান্য লাভে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। খুলনা বিভাগীয় প্রানী সম্পদ দপ্তরের সুত্রে জানাগেছে, খুলনা বিভাগের দশ জেলায় মোট ১৬৯ টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাটের সংখ্যা ১২০ টি এবং অস্থায়ী পশুরহাট রয়েছে ৪৯ টি। হাট গুলোর মধ্যে খুলনায় ২২ টি, বাগেরহাটে ৩৩ টি, সাতক্ষীরায় ১৫ টি, যশোরে ১৯, ঝিনাইদহে ২২, মাগুরায় ১৯, নড়াইলে ৮, কুস্টিয়ায় ১৭, চুয়াডাঙ্গায় ৮ এবং মেহেরপুরে ৬ টি হাট স্থাপন করা হয়েছে। খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই এই হাট গুলেতে পশু আনতে শুরু করেছেন।