
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, নেত্রকোনা জেলা ক্রাইম রিপোর্টারঃ
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় জমি সংক্রান্ত জেরে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৬/৭ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায় স্থানীয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে ।
২৯ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় কেন্দুয়া উপজেলার ৯নং নওপাড়া ইউনিয়নের আটাশিয়া মাইজকান্দি গ্রামে সবুজ মিয়ার ছেলেরা বনাম সাবেক মেম্বার মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলেরার সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ।
আহতরা হলেন- মোঃ সবুজ মিয়ার ছেলে-মামুন (৩৫), এমদাদুল (২০) ও এনামুল (৩০) এবং মৃত মো. মুসলিম উদ্দিনের ছেলে -জাহাঙ্গীর (৩৮), আলমগীর (৩৫), জুয়েল (৩০) ও মেয়ে -হাওয়া । এর মধ্যে কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ( আদমপুর কেন্দুয়া ) ও কয়েকজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়- মৃত ইস্কান্দর আলীর বড় মেয়ে জ্যোৎস্না আক্তার (৫০) (স্বামীঃ মোঃ সবুজ মিয়া) এর সাথে তিনি বলেন- আমরা দুই বোন, আপন ভাই বলতে কেউ নেই, ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি । বড় হয়েছি সামছুদ্দীন চাচার কাছে । বর্তমানে তিন (৩) চাচার কেউ জীবিত নেই, উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পত্তি আমি ও আমার বোনে পাই । অনেক দরবার সালিশ হয়েছে গ্রামে। সর্বশেষ গত মাসেও গ্রামের সকল মাতব্বরকে নিয়ে দরবার সালিশ হয় । দরবারের সিদ্ধান্তে আমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে তাদের বললে তারা তাদের কাগজপত্র দেখানোর ছলে চলে যায়। এর মধ্যে আর যোগাযোগ করেনি। আজ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মৃত সাবেক মেম্বার মুসলিম উদ্দিনের জাহাঙ্গীর, আলমগীর, জুয়েল নামীয় ছেলেরা আমার উক্ত জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে আমার ছেলেরা বাঁধা দেয়। জাহাঙ্গীর গং তারা উগ্র হয়ে আমার ছেলেদেরকে মারতে আসে। এরপরই মারামারি গন্ডগোল শুরু হয়। এর আগেও একাধিকবার জাহাঙ্গীররা আমাদেরকে মারধর করে আহত করেছে। কয়েকবার থানায় অভিযোগও করা আছে,আমি ন্যায় বিচার চাই সাথে আমার প্রাপ্ত অধিকার চাই ।
মোছাঃ ললিতা আক্তার, স্বামী রশিদ মিয়া তিনি বলেন- ঘটনা সময় আমি ছিলাম দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে কিন্তু যখন মানুষ ফিরাইতে গেছে তখন জাহাঙ্গীর নিজের হাতের দাও দিয়ে নিজের মাথায় কুপাইতে দেখেছি।
জাহাঙ্গীরের সম্পর্কে চাচা আবদুল আজিজের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমি রোগীদের নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল হাসপাতালে আছি, একজনের অবস্থা ভালো না, এবং নেট সমস্যা দেখা যায় পরে কথা বলবো।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন রিপন বলেন- শুনেছি গ্রামের দরবার অমান্য করে মুসলিম উদ্দিনের ছেলেরা জমিতে গেলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয় ।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য হারিফ উদ্দিন হানিফ মুঠোফোনে জানান- বিষয়টি সম্পর্কে আমি জেনেছি। গন্ডগুল হওয়ার পর উক্ত গ্রামে গিয়ে ছিলাম। ঐসময় এসআই হারুন অর রশিদসহ সংগীয় ফোর্স সহ এসময় উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে একাধিক দরবার শালিসিও হয়েছে। জ্যোৎস্না আক্তার এই সম্পত্তির প্রাপ্ত অধিকার পাবে। কিন্তু মুসলিম উদ্দিনের ছেলেরা দরবার অমান্য করে জমি দখলে গেলে এই অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যা কারোরই কাম্য নয়। আমি এ বিষয় সমাধান চাই।
উক্ত গ্রামের সাধারণ মানুষ দিনমজুর সামছু মিয়া, আনছু মিয়া, সিরাজ মিয়া, শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়- আটাশিয়া মাইজকান্দি গ্রামের সাবেক মেম্বার মৃত মুসলিম উদ্দিন ছিল হিংস্র ও দুদর্শ লাঠিয়াল প্রকৃতির লোক। ১৯৯৬ সালে তার বাবা জালাল উদ্দীনকে নিজের হাতে জবাই করে তার ভগ্নীপতি রেহান মিয়া গংদের মামলা দিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে প্রায় ১০ বছর জেল হাজত কাটিয়ে ছিল, জবাই করার সময় জাহাঙ্গীর সাথে ছিল। এছাড়াও মুসলিম উদ্দিনের নিজের বড় ছেলে রুবেল মিয়াকে পেটে দা দিয়ে আঘাত করে দুটি হাতে ভেঙে মেরে ফেলতে চেয়ে ছিল মুসলিম উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর গংরা। কিন্তু আল্লাহ সহায় আছে বলে মরে নাই। এখন সে পাগল হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার জবানবন্দি নিলে এখনো বলবে রুবেল।
সামছুদ্দীনের ছেলে আবু সাদেক বলেন- এই ঘটনা হয়েছে আমি শুনেছি, জাহাঙ্গীর গংরা লোক ভালো না, আমি কয়েকবার সমঝোতার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু জাহাঙ্গীররা সমঝোতায় আসতে চায় না, জোৎসাকে আমার বাবা লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছে। এই জোৎসা জায়গা পায়।
নওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট সারোয়ার জাহান কাওছারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁর নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার এসআই মোঃ হারুনুর রশিদের সাথে কথা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন – আমি ঘটনা স্থলে গিয়েছিলাম। মারামারিতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।