
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
খুলনার রুপসায় সড়ক নির্মান শেষ। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি হস্তান্তরের আগেই ভেঙে পড়েছে সাড়ে ৩ শত ফুট। নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম করায় মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই ১০ ফুট চওড়া রাস্তার দুই তৃতীয়াংশ ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও ঠিকাদারের দাবি বৃষ্টির কারনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা এলজিইডি তথ্য সুত্রে জানাযায়, রুপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নে বামনডাঙ্গা বাজার পুলিশ ক্যাম্প ও চাদপুর দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত পুরাতন সড়কটিতে নতুনভাবে কাজ করা হয়েছে ১৪৮৫ মিটার। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে প্রশস্ত ও শক্তিশালী করন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৪-২০২৫ অর্থ বছরে ১ কোটি ৫২ লাখ ২৮ হাজার ১১৫ টাকা ব্যয় ধরা সড়কের নির্মানের টেন্ডার পান মেসার্স জারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মো: জিল্লুর রহমান। পরে ঔই প্রতিষ্ঠান থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেন এস এম সালাউদ্দিন ও ওবায়দুল। অথচ কাজ শেষ হতে না হতেই সড়কটির প্রায় সাড়ে তিনশত ফুট ভেঙে যায়। সরেজমিনে জানাযায়, সড়ক নির্মানের কাজ শেষ হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। কাজ চলমান অবস্থায় ফাটল ও ভাঙন সৃষ্টি হয়। ফলে সল্প সময়ের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ফাটল দেখে স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দিলে, তা মান্য না করে দায়সারা ভাবে কাজ শেষ হয়। ঔই এলাকার আরো একজন বাসিন্দা মো: আসমত আলী বলেন, দায়সারা কাজ করার ফলে বৃষ্টির পানিতে ভেঙে গেছে। সড়ক নির্মান কাজ সঠিক নিয়মে করলে এ ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হতো না। পুরো সড়ক জুড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে সোল্ডারের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীরা অনেকবার বলে কয়ে এ রাস্তা পেয়েছি। কাজটি শুরু করলে ভেবেছিলাম গ্রাম থেকে এখন শান্তি মত রোগী বহন, এ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারবে। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা চলাচলে সুবিধা পাবে। তা সম্পুর্ন উল্টে পুর্বের অবস্থা থেকে আরো খারাপ হয়েছে। পুকুর পাড় ভাঙার ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা তালুকদার বাদশা মিয়া বলেন, দুই পাশে পুকুর মাঝখান দিয়ে সড়কের ২০ ফিটের মতো ভেঙে চলে গেছে। শুধুমাত্র ” গাইড ওয়াল” সঠিক নিয়মে না থাকায় বৃষ্টির পানির চাপ সহ্য করতে পারেনি। এখানে গাইড ওয়াল আরো উচু করে দিলে এ ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এলাকাবাসীর একমাত্র পথ দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ দিন পর সংস্কার করা হলো। কিন্তু বৃষ্টির সময় কাজ করার কারনে কাজ চলমান অবস্থায় রাস্তায় ফাটল ধরে, পরে তা ভেঙে যায়। রাস্তার গোড়া থেকে মাটি কেটে নিয়ে পায়েলিং এর ভিতর দেওয়ার ফলে ফাটল ধরা জায়গা থেকে দ্রুত ভেঙে যায় । গাইড ওয়াল তুলনা মুলক ছোট / নিচু দেওয়ার ফলে এমনটি ঘটেছে। অপরিকল্পিত কাজে সরকারের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তদরুপ সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কাজের তদারকিতে খুব একটা আসেনি। ঠিকাদাররা দায়সারা ভাবে কাজ করে চলেগেছে। সড়কটির কাজ যখন শুরু হয় তখনই নিন্ম মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে।এ কারনে এত অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তাটি ভেঙে যায়। মুল ঠিকাদার জিল্লুর রহমানকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে সাব কন্ট্রাক্টর এস এম সালাউদ্দিন বলেন, সড়কের কাজ পরিপূর্ণ শেষ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারনে অল্প দিনে ভেঙে যায়। তবে কতৃপক্ষ আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, কমকর্তারা এসি রুমে বসে অপরিকল্পিত এস্টিমেট করেন যেখানে গাইড ওয়ালের খুটি লাগবে ১০ মিটার সেখানে এস্টিমেট দেন ৩ মিটার। একটা খাল পাড়ে ৩ মিটার খুটি দিয়ে কি হবে। তারপরও কর্মকর্তারা মনে করেন ফিল্ডের লোকেরা টাকা মেরে খাবে। রুপসা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শোভন সরকার বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ সংশোধনের পত্র প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এখনোও চুড়ান্ত বিল পাওনা রয়েছে। তারা বৃষ্টির কারনে কাজ করতে পারছেন না। বৃষ্টি কমলেই পুন সংস্কারের কাজ শুরু করবেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা রিকতা বলেন, বামনডাঙ্গায় রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলীকে পর্যবেক্ষন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি, এবং আমরাও মনিটরিং করছি।