
স্টাফ রিপোর্টার;
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কৃতি সন্তান, দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা অধ্যাপক যতীন সরকার ছিলেন ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি সুদীর্ঘকাল মননশীল সাহিত্যচর্চা, প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা ছিল তার প্রথম গ্রন্থ। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়— বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব। শিশুদের জন্য তিনি একটি ব্যাকরণ গ্রন্থও রচনা করেন।
বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালায় তিনি লিখেছেন— কেদারনাথ মজুমদার, চন্দ্রকুমার দে, হরিচরণ আচার্য ও সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী। সম্পাদনা করেছেন— রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী, প্রসঙ্গ মৌলবাদ ও জালাল গীতিকা সমগ্র। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন, দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, সাহিত্য নিয়ে নানাকথা প্রভৃতি।
সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
অধ্যাপক যতীন সরকারের মৃত্যুতে কেন্দুয়াবাসীসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জীবন ও কর্ম জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।