, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সফল চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রধানিয়ার মৃত্যুতে ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের শোক প্রকাশ চট্টগ্রামে খালপাড় থেকে কেন্দুয়ার তরুণ নিখোঁজ। বন্যহাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক, ক্ষতিগ্রস্ত ফসল ও ঘরবাড়ি। ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪, সিপিএসসি কর্তৃক২ জন অপহরণকৃত ভিকটিম উদ্ধার সহ চাঁদাবাজ দলে ৫ সদস্য গ্রেফতার। ত্যাগ ও সংগ্রামের ৪২ বছর পর নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী। গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় বাংলাদেশ জার্নালিস্ট প্রটেক্ট কমিটির মানববন্ধন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে: গোলাম পরোয়ায়। ওসমানীনগরে যৌথ কাব্যগ্রন্থ এসো আলোর পথে’র মোড়ক উন্মোচন। খুলনার ডুমুরিয়ায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, ১ জন মৃত্যু। খুলনার ডুমুরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস থেকে দুই কোটি টাকা মুল্যের মাদক” আইস ” উদ্ধার : আটক ২ জন।
দৈনিক সাম্যবাদী নিউজ

বন্যহাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক, ক্ষতিগ্রস্ত ফসল ও ঘরবাড়ি।

  • প্রকাশের সময় : ৯ ঘন্টা আগে
  • ১৯ পড়া হয়েছে

 

জাকিরুল ইসলাম বাবু,জামালপুর প্রতিনিধি;

জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের অন্তত ২৫টি গ্রামে বন্যহাতির তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত কয়েক দলে বিভক্ত শতাধিক হাতির পাল এসব এলাকায় প্রবেশ করে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গহীন বনাঞ্চলে বসবাসকারী হাতির দল প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সমতলভূমিতে চলে আসে। এ সময় তারা ধান, কলা, আদা, হলুদসহ মৌসুমী ফসল খেয়ে ও বাগানের গাছপালা ভেঙে ফেলে। কিছু এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রভাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, দিঘলাকোনা, লাউচাপড়া, হাতিবেড়কোনা, শোমনাথপাড়া, চন্দ্রপাড়া এবং শ্রীবরদী উপজেলার কর্নজোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গা জল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা, পাঁচমেঘাদলসহ সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি জনপদ। এসব গ্রামে বাঙালি, গারো, কোচ ও হাজংসহ অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে।

বালুঝরি গ্রামের বাসিন্দা ফতেহ সাংমা বলেন, “রাতভর মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে আর বাঁশের ফটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তারপরও কিছু হাতি গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করেছে।”

লাউচাপড়ার সবুজ আলী জানান, “পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাবার না থাকলেই হাতিরা লোকালয়ে চলে আসে। তখনই ফসল ও গাছপালা নষ্ট হয়।”

দিঘলাকোনা গ্রামের পিটিসং সাংমা বলেন, “আমরা কলা, আদা, হলুদ ও ধান চাষ করি। হাতির পাল এলে শুধু ফসলই নয়, অনেক সময় ঘরবাড়িতেও হামলা চালায়।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ১৫ বছর ধরে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে হাতির আক্রমণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক জমি চাষাবাদ না করে ফাঁকা ফেলে রাখতে হচ্ছে। চাষকৃত ফসল ঘরে তুলতে না পারার শঙ্কা রয়েছে সবসময়।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত বকশীগঞ্জ, শ্রীবরদী ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে ৭০ জন নিহত এবং প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, মানুষের হাতে মারা পড়েছে ৩৯টি হাতি।

এ নিয়ে কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল বলেন, “হাতির আক্রমণ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বড় সমস্যা। কখন কোথায় আক্রমণ করবে তা বলা মুশকিল। স্থায়ী সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।”

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, “সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”এলাকাবাসীর দাবি, বন্যহাতি প্রতিরোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।

জনপ্রিয়

রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সফল চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রধানিয়ার মৃত্যুতে ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের শোক প্রকাশ

দৈনিক সাম্যবাদী নিউজ

বন্যহাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক, ক্ষতিগ্রস্ত ফসল ও ঘরবাড়ি।

প্রকাশের সময় : ৯ ঘন্টা আগে

 

জাকিরুল ইসলাম বাবু,জামালপুর প্রতিনিধি;

জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের অন্তত ২৫টি গ্রামে বন্যহাতির তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত কয়েক দলে বিভক্ত শতাধিক হাতির পাল এসব এলাকায় প্রবেশ করে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গহীন বনাঞ্চলে বসবাসকারী হাতির দল প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সমতলভূমিতে চলে আসে। এ সময় তারা ধান, কলা, আদা, হলুদসহ মৌসুমী ফসল খেয়ে ও বাগানের গাছপালা ভেঙে ফেলে। কিছু এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রভাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, দিঘলাকোনা, লাউচাপড়া, হাতিবেড়কোনা, শোমনাথপাড়া, চন্দ্রপাড়া এবং শ্রীবরদী উপজেলার কর্নজোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গা জল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা, পাঁচমেঘাদলসহ সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি জনপদ। এসব গ্রামে বাঙালি, গারো, কোচ ও হাজংসহ অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে।

বালুঝরি গ্রামের বাসিন্দা ফতেহ সাংমা বলেন, “রাতভর মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে আর বাঁশের ফটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তারপরও কিছু হাতি গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করেছে।”

লাউচাপড়ার সবুজ আলী জানান, “পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাবার না থাকলেই হাতিরা লোকালয়ে চলে আসে। তখনই ফসল ও গাছপালা নষ্ট হয়।”

দিঘলাকোনা গ্রামের পিটিসং সাংমা বলেন, “আমরা কলা, আদা, হলুদ ও ধান চাষ করি। হাতির পাল এলে শুধু ফসলই নয়, অনেক সময় ঘরবাড়িতেও হামলা চালায়।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ১৫ বছর ধরে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে হাতির আক্রমণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক জমি চাষাবাদ না করে ফাঁকা ফেলে রাখতে হচ্ছে। চাষকৃত ফসল ঘরে তুলতে না পারার শঙ্কা রয়েছে সবসময়।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত বকশীগঞ্জ, শ্রীবরদী ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে ৭০ জন নিহত এবং প্রায় এক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, মানুষের হাতে মারা পড়েছে ৩৯টি হাতি।

এ নিয়ে কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল বলেন, “হাতির আক্রমণ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বড় সমস্যা। কখন কোথায় আক্রমণ করবে তা বলা মুশকিল। স্থায়ী সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।”

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, “সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”এলাকাবাসীর দাবি, বন্যহাতি প্রতিরোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। তা না হলে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।