
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
দেনার টাকা পরিশোধ করতে পুর্ব রুপসা কৃষি ব্যাংক ব্যাবস্থাপকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋনের আবেদন করে ইউনুস শেখ। ব্যবস্থাপক সেই ঋন না দেওয়ায় মনের ক্ষোভে ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুযোগ খুজতে থাকে ইউনুস। শুক্রবার ভোর ৬ টার দিকে প্রহরী ব্যাংক ছেড়ে গেলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ইউনুস শেখ। আজ ১৯ আগষ্ট এমন বিবরন জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন ব্যাংক লুটের প্রধান হোতা ইউনুস শেখ। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত রুপসার বিচারক অনন্যা রায়। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। এর আগে রোববার ভোর রাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকের চারতলা থেকে ইউনুস শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ব্যাংকের চতুর্থতলায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। ব্যাংকের নিচতলায় ছিল লেদ ওয়ার্কসপ। পরে পুলিশ তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিভিন্ন স্থান থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ টাকা উদ্ধার করে। ইউনুস শেখের জবানবন্দির বরাত দিয়ে রুপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান বলেন, দেনার দায়ে জর্জরিত ছিলেন ইউনুস শেখ। সেই দেনা পরিশোধের জন্য কৃষি ব্যাংক পুর্ব রুপসা ব্যাবস্থাপকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋনের আবেদন করেন ইউনুস। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু ব্যাংকের ব্যাবস্থাপকের বাধায় সেই ঋন আর পাওয়া হয়নি ইউনুসকে। পরবর্তীতে সেই টাকা জোগাড় করার জন্য ব্যাংক লুটের বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুযোগ খুজতে থাকে সে। সুযোগ পেয়ে যায় শুক্রবার ভোর রাতে। ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় নিচের ওয়ার্কসপে গিয়ে প্রথমে গ্রাইন্ডিং মেশিন এনে কলাপসিবলের তালা কেটে ফেলে। তালা কাটতে তার দেড় মিনিটের মতো সময় লাগে। এরপর সে মুল ফটকের প্রবেশদ্ধার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে স্ক্র ড্রাইভার দিয়ে ভল্ট ভেঙে ফেলে। সেখান থেকে ২০ ও ৫০ টাকার নোট গুলো নিয়ে নেয়। সেগুলো নিয়ে তার তোশকের নিচে রাখে। এরপর আবার দুপুরে ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করে। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট গুলো লুঙ্গিতে করে তৃতীয় তলার ফাকা একটি কক্ষে রেখে দেয়। প্রথম পর্বে নেওয়া টাকা গুলো দিয়ে ইউনুস চালের দোকান, মুদি দোকান এবং বিভিন্ন সমিতির দেনা পরিশোধ করে। তিনি আরো বলেন, তার শারীরিক অবয়ব কেউ কোনভাবে শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য সে হাতে মোজা এবং মুখে পলিথিন পরে। পরবর্তীতে সিসি ফুটেজে তার শারীরিক গঠন দেখে রোববার ভোররাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে ব্যাংক লুটের কথা স্বীকার করে। সে টাকা গুলো বিভিন্ন সমিতি এবং দেনা হওয়া দোকান গুলোতে পরিশোধ করে। দুদিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া টাকা কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমান ১ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ টাকা। ইউনুস সেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিতে চাইলে তাকে দুপুর ১ টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য পুর্ব রুপসা কৃষি ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা লুট হয়। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক বন্ধের পর থেকে শুক্রবার রাত ১০ টার মধ্যে ব্যাংক লুটের এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের দাবি।