
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, কেসিসি প্রশাসক মো: ফিরোজ সরকারের নিকট আজ ২০ আগষ্ট বিকাল ৩ টায় নগর ভবনে প্রদান করা হয়। খুলনা নাগরিক সমাজের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড: আ ফ ম মহসীন এবং সদস্য সচিব এ্যাড: বাবুল হাওলাদারের নেতৃত্বে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিজামুর রহমান লালু, মিজানুর রহমান বাবু, সরদার আবু তাহের, এস এম দেলোয়ার হোসেন, এস কে তাছাদুজ্জামান, জামাল মোড়ল, মিলন বিশ্বাস, রহমত আলী, শাহীন হাওলাদার, এস এম রোহান প্রমুখ। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, খুলনায়
পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে পেট্রো বাংলার অধীন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ভেড়ামারা হতে খুলনায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু করে ২০১২ সালে এ প্রক্লপের আওতায় ভেড়ামারা হতে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ বসানোর পর কতৃপক্ষ একটি খোড়া যুক্তিতে উক্ত প্রকল্প পতিত ঘোষণা করে পরবর্তীতে পাইপ সহ অন্যান্য নির্মান সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলার উদাসিনতা মুলত দায়ি। এ প্রকল্পে বিপুল পরিমান রাস্ট্রিয় অর্থ অপচয় হলেও মজার ব্যাপার কতৃপক্ষেকে কোনো প্রকার জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। পরবর্তীতে ভোলা- বরিশাল- খুলনা রুটে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তে এ অঞ্চলের মানুষ পুনরায় আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু এ প্রক্লপের আওতায় ভোলা – বরিশাল সম্ভাব্য যাচাই সহ বেশকিছু কাজ এগুনোর পর অকস্মাত গত ৫ মার্চ ২০২৫ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এক সাক্ষরে এ প্রকল্প স্থগিত করে ভোলা- বরিশাল- ঢাকা রুটে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্তের সংবাদ এ অঞ্চলের মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করে। সম্ভাবনাময়ী এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ড বিশেষ করে শিল্পোৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনার সম্ভাব্য উন্মোচিত দ্ধার বন্ধ হয়ে যায়। খুলনার রাস্ট্রায়ত্ত পাটকল গুলো লোকসানের অজুহাতে রাতের আধারে তৎকালীন সরকার তাদের পেটোয়া বাহিনী দ্ধারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বন্ধ করে দেয়। এর পুর্বে আরোও আরোও অনেক ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প বন্ধ করে শিল্প নগরী খুলনাকে বিরান ভুমিতে পরিনত করা হয়েছে। খুলনায় নুন্যতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল কানকশনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে বন্ধ কারখানা গুলোর যান্ত্রিক ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে, গ্যাসের ব্যবহার উপযোগী করে পতিত থাকা বিপুল পরিমান ভুমি এবং অবকাঠামো সাথে সাথে বিশাল অংকের বেতন ভাতা প্রাপ্ত জনবল কাজে লাগিয়ে এগুলোকে লাভ জনক খাতে পরিনত করা সম্ভব। এখানে রয়েছে দেশের দ্ধিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। পদ্মা সেতু নির্মান হওয়ায় যোগাযোগ ব্যাবস্থার অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ যোগ্য। খুলনায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযেগীতায় টিকে থাকার যে সুযোগ তৈরি হবে তাতে করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, বাড়বে ব্যক্তি উদ্যোক্তাও। গ্যাস না থাকায় এ অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহ নেই শিল্প উদ্যোক্তাদের। একটি দেশের টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের অভ্যন্তরের সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে সুপরিকল্পিত ভাবে।উন্নয়ন হতে হবে সুষম। ছোট আয়তন ও সীমিত সম্পদ বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। খুলনায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে বা বন্ধ শিল্প কারখানা চালু হলে শুধুমাত্র খুলনার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে না কম বেশি এ সুবিধা ভোগ করবেন সমগ্র দেশের মানুষ। খুলনায় উৎপাদনের চাকা সচল হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও। সুতারাং খুলনায় গ্যাস সরবরাহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি কোনো দয়া বা করুনার বিষয় নয়। এটি জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্ন। সম্ভাবনাময়ী একটি বিস্তির্ন অঞ্চলকে অবেহেলিত ও বঞ্চিত রেখে, উন্নয়নের মুল ধারা থেকে পাশ কাটিয়ে রেখে, জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সীমিত ভুমি ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করতেই হবে। শুধুমাত্র রাজধানী বা ঢাকা কেন্দ্রীক সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা মারাত্মক বৈষম্য মুলক তাই- ই- না, এটি উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপরিপক্বতা এবং অদুরদর্শীতার পরিচায়ক বলেই আমরা মনে করি। যদিও আবহমানকাল ধরে এ দুষনীয় চর্চাটি চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন জনগণের প্রত্যাশার সরকারের নিকট থেকে আমরা কোনোভাবেই এমনটা আশা করি না।