
শাহ আলী তৌফিক রিপন, বিশেষ প্রতিনিধি;
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চাঞ্চল্যকর সিএনজি চালক নূর জামান (৩৮) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন আরও দুই আসামি। এর আগে একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তিন আসামির জবানবন্দি ও তদন্তের তথ্য মিলিয়ে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে ঘটনার নেপথ্যের চিত্র।
কেন্দুয়া থানা সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেন্দুয়া ও কলমাকান্দা থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তদন্তে প্রাপ্ত সন্দেহভাজন দুই আসামি—
১। মো. রেহাব মিয়া (৪২),
২। মো. সোহাগ মিয়া (৩০),
(উভয়ের পিতা মৃত রাজ আলী, মাতা হালেমা আক্তার, সাং- ভাগ্যবপুর বড়বাড়ী, থানা- কেন্দুয়া, জেলা- নেত্রকোণা) —কে গ্রেফতার করা হয়।
পরে আদালতে হাজির করলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে।
এর আগে গত ২১ আগস্ট রাতে প্রথম আসামি হিসেবে রাঘবপুর গ্রামের অলি মিয়া (৩০), পিতা মো. আ. রাজ্জাক, মাতা ছালেমা—কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
নিহত নূর জামান জীবিকা নির্বাহের জন্য সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। ১৯ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে তিনি নিজ বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।
২০ আগস্ট রাত প্রায় ৩টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে চিরাং ইউনিয়নের দুল্লী ব্রিজ এলাকায় যায়। সেখানে একটি অটোরিকশা রক্তমাখা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিটের নিচ ও সামনের অংশে রক্তের দাগ থাকায় পুলিশ আশপাশে তল্লাশি চালায়। পরে ব্রিজ থেকে ১০০ গজ দূরে এক পুকুরে কচুরিপানার নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের ধারণা, রাত ১০টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যে কোনো এক সময়ে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়।
ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী শিরিন আক্তার (৩২) বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৫, ধারা ৩০২/২০১/৩৪)। মামলার তদন্তভার এসআই মো. আ. জলিলের উপর অর্পণ করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামিদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আর্থিক লেনদেন ও সিএনজি দখলকে ঘিরে বিরোধের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে মূল পরিকল্পনাকারী বা প্ররোচনাকারী কারা, তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।
কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, “ঘটনার তদন্তে আমরা অনেক অগ্রগতি করেছি। গ্রেফতারকৃত তিন আসামিই হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, শুধু খুনিদের গ্রেফতার করাই যথেষ্ট নয়, ঘটনার নেপথ্যের হোতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
একই সঙ্গে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি চালিয়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।