রেজুয়ান হাসান জয়, (নেত্রকোনা)

জীবন মানেই যন্ত্রণা এমন অমর পঙ্‌ক্তি যাঁর কলমে জন্ম নিয়েছিল, সেই গানের মানুষ বাউল সালাম সরকার আজ নিজেই সেই যন্ত্রণার ভিতর বন্দি। সুরের মানুষটি এখন নিঃশব্দ ঘরে শুয়ে আছেন, পাশে কেবল ব্যথার সঙ্গীত।

কয়েক মাস আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। প্রথমে ঢাকায়, পরে ময়মনসিংহে দুই জায়গায় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা চিকিৎসায় খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন চিকিৎসা থেমে আছে একটাই কারণে অর্থের অভাব।

একসময় জীবন মানেই তো যন্ত্রণা, মন নিয়া সে খেলা করে, এমন বাস্তবের গানে মাটির গন্ধ, ভালোবাসা আর মানুষের কষ্ট ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। আজ সেই মানুষই নিজের জীবনের কঠিনতম অধ্যায়ে এসে থেমে আছেন নিঃসঙ্গ।

বর্তমানে কেন্দুয়ার পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী সালাম সরকার। ভাঙা পা, সংক্রমণ, ব্যথা আর অনিশ্চয়তার দিন পার করছেন তিনি। স্ত্রী সারাক্ষণ সেবা করছেন, কিন্তু দীর্ঘদিনের ক্লান্তিতে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংসারের আয় বন্ধ কিন্তু ব্যয় বন্ধ হয়নি।

সালাম সরকারের দুই ছেলে একজনের বিয়ে হয়েছে, অন্যজন এখনো ছাত্র। সংসারের সব বোঝা আজ প্রায় ভেঙে পড়েছে এই পরিবারে।

স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন, যিনি সারাজীবন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর গান লিখেছেন, তাঁর পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

বাউল সালামের শিষ্য মুকুল সরকার আবেগভরে বলেন, আমার উস্তাদ এখন অসহায় অবস্থায় আছেন। সমাজের দয়ালু মানুষ, সংস্কৃতিপ্রেমীরা যদি একটু হাত বাড়ান, হয়তো আবার তিনি গাইতে পারবেন জীবনের জয়গান।

এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার নিজে অসুস্থ সালাম সরকারের খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।

জীবন মানেই তো যন্ত্রণা, তবু বেঁচে থাকা মানে আশার আলো খোঁজা।