
স্টাফ রিপোর্টার, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা):
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় প্রেমঘটিত সম্পর্কের জেরে বিষ (কীটনাশক) পানে সুমাইয়া আক্তার (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহত সুমাইয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের দিনমজুর সাহাব উদ্দিন ও জোছনা আক্তারের কন্যা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার (২৯ জুন) বিষপান করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সুমাইয়া। প্রথমে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তবে ঢাকা পৌঁছার আগেই, মঙ্গলবার (১ জুলাই) গাজীপুরের মাওনা এলাকায় পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।
সরেজমিনে রোয়াইলবাড়ি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে একই ইউনিয়নের নিলাম্বরখিলা গ্রামের মো. আরজু মেম্বারের ছেলে ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী পূর্ণর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা রোয়াইলবাড়ি ফাজিল মাদ্রাসায় পড়ার সময় এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তবে গত ১৫–২০ দিন ধরে পূর্ণ সুমাইয়াকে এড়িয়ে চলছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করে গেছেন সুমাইয়া। মৃত্যুর আগে সে দুটি চিঠি লিখে যান, যেখানে পূর্ণর অন্য এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে। এ থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতের মা জোছনা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার কোনো ছেলে নেই, মেয়েরাই আমার ভরসা ছিল। সুমাইয়া নিজেই তার সম্পর্কের কথা জানিয়েছিল। আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য পূর্ণই দায়ী। আমি এর বিচার চাই।
পূর্ণর বড় ভাই আনিসুল হক মুঠোফোনে বলেন, আমি বর্তমানে কেন্দুয়ার বাইরে। বিষয়টি এলাকার কয়েকজনের ফোন পেয়ে জানতে পেরেছি, আগে কিছুই জানতাম না।
স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি করছেন, সুমাইয়া হয়তো তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। যদিও এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সুমাইয়ার মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তবে পুলিশ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের তৎপরতায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, “মেয়েটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। একটি তরতাজা প্রাণের এমন মর্মান্তিক পরিণতির জন্য দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।