
মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামিলীগ জঙ্গী সংগঠনে পরিনত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ গোপালগঞ্জে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, এমন নাশকতা – সহিংসতা দেশের যেকোন জায়গায় যেকোন স্থানে যেকারোর ওপর ঘটাতে পারে আশংকা প্রকাশ করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স নিয়েই তারা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছিলেন উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এরপর যেভাবে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা হামলা চালিয়েছে, তা প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রমান দেয়। তিনি জানেন হামলা সত্ত্বেও তাদের পুর্ব নির্ধারিত পদযাত্রা কর্মসুচি অব্যাহত থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর ও রাজবাড়িতে পদযাত্রা ও পথসভা হবে। বুধবার মাদারীপুর ও শরিয়তপুরের কর্মসুচি স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে সেখানে সমাবেশ হবে। হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসুচিরও ঘোষণা দেন তিনি। বুধবার রাতে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এ দাবি জানান তিনি। এনসিপির মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রার ১৬তম দিনে গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামিলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা ও তান্ডবের প্রতিবাদে এ সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর আগে মাগরিবের কিছু পরেও এনসিপির নেতারা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ও পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা কর্ডোনের মধ্যে খুলনা সার্কিট হাউজে এসে পৌছান। তাদের বহরে কয়েশ কর্মী ছিলেন। বহরে কিছু গাড়ি ভাঙচুর অবস্থায় দেখা গেছে। সেখানে কয়েকজন আহত কর্মীও ছিলেন। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯ টার কিছু পরে খুলনা প্রসক্লাবে শুরু হয় কনফারেন্স। সেখানে সুচনা বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম,ডা: তাসনিম জারা প্রমুখ। এছাড়াও খুলনা মহানগর ও জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জ ফ্যাসিবাদের আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সারা দেশে আওয়ামীলীগের যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সবাই এখানে এসে ঠাঁই নিয়েছে। এখানে আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্যকেউ রাজনীতি করতে পারবে না বলে বিশ্বাস তৈরি করা হয়েছিল। আজ বাঁধা সত্ত্বেও সমাবেশ সফল করে এনসিপি সেই মিথ্যা ভেঙে দিয়েছে। আজ তারা মুজিবাদী জঙ্গী চেহারা জনগনের সামনে উম্মোচন করেছে। তিনি আরো বলেন, আজ দফায় দফায় তারা হামলা করেছে, এনসিপির কর্মসুচি ছিল পুর্ব ঘোষিত। ফলে জঙ্গী সংগঠন আওয়ামিলীগ পুর্ব পরিকল্পনা করেই এঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের পৌছানোর পুর্বেই আমাদের সমাবেশ মঞ্চ হামলার শিকার হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউএনওর উপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। প্রশাসন পরে যে তৎপরতা দেখিয়েছে তা শুরু থেকে দেখানোর দরকার ছিল। এখানে কোন স্যাবোজাট আছে কিনা তা তদন্ত করতে হবে। হামলার সাথে কারা জড়িত তা ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুজে বের করে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সারাদেশের মানুষের কাছে জুলাই গনঅভ্যুত্থানে বার্তা পৌছে দিতে এবং সেই এলাকার মানুষের কথা শুনতে পদযাত্রা কর্মসুচি নিয়েছি। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের বাহিরের কোন জেলা নয়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মামলার সমস্ত আসামীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন গোপালগঞ্জ ফ্যাসিস্টদের একটা আশ্রয় কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। সারাদেশে ছাত্রলীগের যাদের নামে মামলা রয়েছে তারা সেখানে অবস্থান করছে। তারা খুবই পরিকল্পিতভাবে এনসিপির নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র এ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু গোপালগঞ্জে আওয়ামীলীগ ছাড়া কেউ প্রগ্রাম করতে পারবে না। কিন্তু এই ভীত এনসিপি সমাবেশ করে ভেঙে দিয়েছে। তিনি বলেন গোপালগঞ্জে আমাদের কর্মী ও পরিবারের ওপর হুমকি আছে। এই পরিকল্পিত হামলার জন্য আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি সরকার ও প্রশাসনের প্রতি ঘটনার সাথে জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামিলীগ ও ছাত্রলীগ সহ তাদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের আহবান জানিয়ে বলেন, তারা এখন জঙ্গী সংগঠনে পরিনত হয়েছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে গোপালগঞ্জের মানুষ নিরাপদ থাকবে না। নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ৩০ দিনে দেশের ৬৪ জেলায় যাবে। আগামীকাল ফরিদপুরে সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগের সময় সুচী অনুযায়ী পথসভা চলতে থাকবে। এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ কোনভাবেই ঠেকানো যাবে না। সংবাদ সন্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, ডা: তাসনিম জারা সহ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।